(পূর্ব প্রকাশের পর)
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে মেজর জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা বিষয়ে এর আগের কিস্তিতে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। আজকের এ পর্বে আলোচনা করব তার আগের প্রেক্ষাপট নিয়ে। জিয়ার ঘোষণার আগে কী কী ঘটেছিল এবং কোন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মধ্যমসারির কর্মকর্তা মেজর জিয়া বিদ্রোহ করে স্বদেশের পক্ষে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তার পূর্বাপর কারণের সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্পণে ইয়াহিয়া গং শুরু করে টালবাহানা। তারই শেষ পর্যায়ে ১ মার্চ বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ আহূত জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রবের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভায় ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত হয় জনসভা, যে জনসভায় ঐতিহাসিক ভাষণ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন মঞ্চে ওঠেন তখন জনসভা রূপ নিয়েছে উত্তাল জনসমুদ্রের। সে জনসমুদ্র থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান। শেখ মুজিব তার ভাষণে ১৯৪৭ সাল থেকে বিগত ২৩ বছরে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের বঞ্চনা-লাঞ্ছনার বিবরণ, সত্তরের জাতীয় নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনাবলি ও ইয়াহিয়া-ভুট্টোর চক্রান্তের বিবরণ তুলে ধরেন। একপর্যায়ে তিনি ইয়াহিয়া খানের কাছে চারটি দাবি পেশ করেন—‘১. সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে। ২. সমস্ত সেনাবাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। ৩. হত্যার তদন্ত করতে হবে। ৪. জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’ বক্তৃতার শেষপর্যায়ে তিনি সবাইকে যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। আমাদের এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’
খবরটি শেয়ার করুন