শনিবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেকারত্ব নিরসনে দরকার কর্মমুখী শিক্ষা

জেলা প্রতিনিধি

🕒 প্রকাশ: ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, ৯ই এপ্রিল ২০২৫

#

কর্মমুখী শিক্ষা হলো এমন এক ব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের দ্রুত কর্ম বা চাকরি পেতে সাহায্য করে। মানুষ যে শিক্ষাব্যবস্থায় জীবিকা অর্জনের জন্য কোনো একটি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করেন এবং শিক্ষা শেষে ওই বিষয়ে কর্মসংস্থান প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জন করেন, সেটাই কর্মমুখী শিক্ষা।

এ শিক্ষাব্যবস্থা কোনো ব্যক্তিকে কর্মসংস্থান প্রাপ্তির লক্ষ্যে বিশেষ কোনো কর্মে প্রশিক্ষিত করে তোলে এবং একটি উপযুক্ত কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করে। এ শিক্ষা মূলত ব্যবহারিক, বাস্তবভিত্তিক ও জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা শুধু কর্মসংস্থানই নয়, একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নতির জন্যও অপরিহার্য।

সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা থাকায় কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব দিনদিন বাড়ছে। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা বাড়ায় এবং তাদের সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী করে গড়ে তোলে। এ শিক্ষার কাজ হলো জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তিকে সুদৃঢ় করা।

কর্মমুখী শিক্ষা এমন এক ধরনের ব্যবস্থা, যা গ্রহণ করতে পারলে শিক্ষার্থীরা ঘরে-বাইরে যে কোনো জায়গায় অতি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেন। এ শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান মূলত পেশাগত কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ শিক্ষা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার ফলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন- আমেরিকা, ব্রিটেন, চীন, জাপান, ফ্রান্স ও কোরিয়াসহ  অনেক দেশ আজ নিজের জীবন মানকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে মানুষের সীমিত সম্পদের উপর চাপ পড়ার কারণে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। যার মূল কারণ সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা।

উন্নত দেশ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারিকুলাম তৈরি করে থাকে। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে দক্ষ জনসংখ্যা ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। যেমন- জার্মানিতে প্রায় ৭৩, জাপানে ৬৬, সিঙ্গাপুরে ৬৫, অস্ট্রেলিয়ায় ৬০, চীনে ৫৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করেন। 

বিপরীতে বাংলাদেশে স্বল্পদক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি ৩৮ শতাংশ বলা হলেও কারিগরিভাবে দক্ষ, বা স্বল্পদক্ষ জনশক্তি মাত্র ১৮ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশেও কর্মমুখী শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

উন্নত দেশে শিক্ষা মানে কাজ, চাকরি। তারা জীবন ও প্রয়োজন উপযোগী শিক্ষা লাভ করছে। তাদের পেশাভিত্তিক কারিগরি শিক্ষাই কাজের দিশা খুঁজে দেয়। এ দেশে কর্মমুখী শিক্ষা লাভের অভাবে  শিক্ষার্থীরা নিজের বা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যার কারণে বেকারত্ব দিনদিন বাড়ছে।

বিশ্বায়নের যুগে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও জুতসই তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ  দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণি থেকে কম্পিউটারভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। সময়ের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে হবে। 

বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে মানুষ কৃষিতে, শিল্পে সর্বত্র বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। তাই এসব ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে কর্মমুখী শিক্ষা দরকার। এজন্যই বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর করতে দরকার কর্মমুখী শিক্ষা।

তাই সরকারের উচিত কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বারোপ করা। যে ধরনের শিক্ষা যুগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে, সে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হোক। দক্ষ মানুষ তৈরি করাই হয় হোক আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

Hello

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Top
Footer Top Mobile